আজ ১৮ ডিসেম্বর, বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস। এই দিনটি ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ আরবি ভাষাকে তার অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। আরবি ভাষা হলো মানব সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের একটি স্তম্ভ, যা প্রতিদিন ৪০০ কোটির অধিক মানুষ ব্যবহার করে। এই ভাষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন সাহিত্য, কবিতা, দর্শন, গান, সৃজনশীলতা ও বৈজ্ঞানিক অবদান বিকাশিত হয়েছে, তা অসাধারণ। আরবি ভাষা দিবসের উদ্দেশ্য হলো এই ভাষার ঐতিহ্য, সৌন্দর্য, সৃজনশীলতা ও বৈজ্ঞানিক অবদানকে সম্মান জানানো এবং বহুভাষিকতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করা।
মধ্যযুগেই আরবি ভাষা থেকে শব্দগ্রহন শুরু হয় এবং তা কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত চলতে থাকে। ইংরেজি ভাষায় বহু আরবি শব্দ সরাসরি প্রবেশ করেছে কিংবা ইউরোপের অন্যান্য ভাষার মাধ্যমে প্রবেশ করেছে যেমন ল্যাটিন, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, ইতালীয় ভাষা।
ইংলিশ গবেষক Walt Taylor একটি গবেষণা তৈরি করেছিলেন যার শিরোনাম দেন, Arabic Words in English, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি তা প্রকাশ করে। Sir Taylor বলেন, ইংরেজি ভাষায় আরবি মৌলিক শব্দ প্রায় এক হাজার রয়েছে, আরো হাজার হাজার শব্দ মৌলিক শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে, এগুলোর মধ্যে অর্ধেকের বেশি এখন ব্যবহৃত হয় না কিংবা খুব কম ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ২৬০ টি মৌলিক শব্দ রয়েছে যেগুলো এখনো ইংরেজরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে থাকে।
তার উল্লেখিত শব্দসমূহ অক্সফোর্ড পকেট ডিকশনারিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যা নিশ্চিত করে যে, ইংরেজরা এই শব্দসমূহ দৈনন্দিন জীবনে অনেক ব্যবহার করে। আরো অনেক আরবি শব্দ ইংরেজিতে অন্য রূপ নিয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে কখনও অনেক আবার কখনও সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। সেগুলোর কতগুলো পুরোপুরি ইংরেজি রূপ নিয়েছে আবার কতগুলো আরবি রুপের কাছাকাছি আছে। এই শব্দসমূহ বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ করেছে যেমন, জীবজন্তু , পোশাক, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন ও অন্যান্য।
নিম্নে কতিপয় ইংরেজি শব্দ তার মূল শব্দ আরবি ও ইংরেজি ভাষায় গ্রহনের তারিখসহ উল্লেখ করা হলঃ
Admiral ----- ১২০৫ ----- أمير البحر
Azure ----- ১৩৭৪ ----- أزرق
Tariff ----- ১৫৯১ ----- تعريفة
Algebra ----- ১৪৫২ ----- الجبر
Cable ----- ১২০৫ ----- حبل
Giraff ----- ১৫৯৪ ----- زرافة
Zarnich ----- ১৩৮২ ----- زرنيخ
Spinach ----- ১৫৩০ ----- سبانخ
Syrup ----- ১৩৯২ ----- شراب
Chiffon ----- ১৮৭২ ----- شف
Sahara ----- ১৮৬২ ----- صحارى
Fellah ----- ১৫৪৮ ----- فلاح
Cotton ----- ১২৯০ ----- قطن
Coffee ----- ১৫৯৮ ----- قهوة
Lemon ----- ১৪০০ ----- ليمون
Musk ----- ১৩৯৮ ----- مسك
Magazine ----- ১৫৮৩ -----مخزن
Jasmin ----- ১৫৬২ -----ياسمين
আরো বহু সন্দেহসূচক শব্দ রয়েছে , যেগুলো গ্রহণের সাল পাওয়া যায়নি। যেমনঃ earth>أرض، cover> كفر، coffin> كفن , candle > قنديل , mirror>مرآة , yacht> يخت , zigzag> زقاق , abide> أبد , banana> بنان , messiah> المسيح. satan> شيطان. traffic> تغريق , cuff> كف divan> ديوان eden > عدن
পাক - ভারত উপমহাদেশের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে আরবি ভাষা ও সাহিত্য চর্চা অতি প্রাচীন। বিশেষত মুসলিম শাসনামলে এ অঞ্চলে আরবি শিক্ষা ব্যাপকতা লাভ করে বলে প্রতীয়মান হয়। বর্তমানেও বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এতেও প্রমাণিত হয় যে, অতীতের কোন এক সময় এসব অঞ্চলে আরবি ভাষার ব্যাপক চর্চা ছিল। ধর্মীয় অঙ্গন ব্যতিতও দৈনন্দিন জীবনে অনেক আরবী শব্দ ব্যবহার করা হয়। যেমন
আদালত> عدالة, উকিল>وكيل, হাজির>حاضر, কিস্তি >قسط, সনদ >سند ، রায় > رأي, ওজন> وزن, দোকান> دكان, দেনা> دين, দুনিয়া> دنيا, খবর> خبر, কলম>قلم, ، দোয়াত >دواة، আমানত >أمانة، তারিখ>تاريخ, গোসল> غسل، কামিজ> قميص, জরুরি> ضروري, মাল>مال, জমা> جمع, নগদ>نقد, বাকি>باقي, আদায় > أداء, আসল>أصل,নকল >نقل, মুনাফা> منفعة, লোকসান > نقصان, ফায়দা> فائدة, হজম>هضم, মানা > منع، বদল > بدل، জবাব>جواب، ময়দান>ميدان,নাটক > نطق, মজুদ > موجود، বাতিল>باطل, সবর>صبر, ইশারা > إشارة, কেচ্ছা > قصة ، ফ্যাসাদ > فسد, নজর > نظر, সিন্দুক > صندوق ، জালেম > ظالم, আজব>عجب, মজলুম > مظلوم, জুলুম > ظلم, তফসীল > تفسيل সাবেক >سابق, মহল্লা >محل, হালুয়া >حلوى, আসবাব >أسباب, কাবাব > كباب, মোরব্বা >مربى, মুরব্বি > مربي ইত্যাদি আরো অনেক শব্দ আছে। আঞ্চলিক ভাষায় আরবি শব্দের বহুল ব্যবহার লক্ষনীয়।
একইভাবে হিন্দি ভাষাতেও আরবি শব্দের বহুল ব্যবহার রয়েছে। উর্দু ভাষায় হয়ত এমন কোন বাক্য নেই যেখানে আরবি শব্দ অনুপস্থিত। তদ্রূপ ফারসি, কাবুলি, পাঞ্জাবি, পস্তু, তুর্কীসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য ভাষাগুলোর মাঝেও আরবি শব্দ মিশে একাকার হয়ে গেছে।
English writer Karen Armstrong এর মতে, 'শেক্সপিয়ার এর সবচেয়ে সুন্দর পঙক্তিগুলো অন্য ভাষায় খুবই নগন্য শোনা যায় কারণ কবিতার ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ বিদেশি বাগধারায় প্রকাশ করা যায়। আর আরবী হচ্ছে এমন একটি ভাষা যা অনুবাদ করা বেশ কঠিন। আরবদের মতে, অন্য ভাষায় অনূদিত মূল আরবি কবিতা ও গল্পগুলো তাদের কাছ অপরিচিত মনে হয়। আরবি ভাষায় এমন কিছু আছে যা অন্য কোন বাগধারা অসংলগ্ন বোধ হয় এমনকি আরবী রাজনীতিবিদদের বক্তৃতা গুলিকে একটি ইংরেজি অনুবাদে কৃত্রিম এবং বিদেশী মনে হয়। এটা যদি পার্থিব কথোপকথন বা প্রচলিত সাহিত্যের সাধারণ আরবীতে সত্য হয়, তাহলে এটি কুরআনের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ সত্য যা অত্যন্ত জটিল, প্রগাঢ় ও সাঙ্কেতিক ভাষায় লেখা। এমনকি আরবরা যারা সাবলীলভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে, তারা বলে যে তারা যখন ইংরেজি অনুবাদে কোরআন পড়ে তখন তাদের মনে হয় তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন বই পড়ছে।'
১. الإعراب ( শব্দের শেষে বর্ণের স্বরধ্বনি নিরূপণ) :
আরবি ভাষায় ই'রাব অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। এটি প্রাচীন সভ্যতার ভাষাসমূহের একটি বৈশিষ্ট্য। ই'রাবের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে বাক্যে শব্দের অবস্থান সনাক্ত করা হয়। উদ্দেশ্য, বিধেয়, কর্তা, কর্ম নাকি অন্য কিছু তা নির্ধারণ করা হয়। ভাষাবিদ ইবনে ফারিস এর মতে,
" ই'রাব হচ্ছে কোন শব্দের সমতুল্য অর্থসমূহের মধ্যে পার্থক্যকারী, এটি বক্তার অনুভূতি , চিন্তা ও অর্থের সামগ্রিকতা বিবেচনা সাপেক্ষে তার উদ্দেশ্য ও অর্থের মধ্যে পার্থক্য নির্দিষ্ট করে। "
২. الاشتقاق ( শব্দের ব্যুৎপত্তি) :
শব্দের ব্যুৎপত্তি হচ্ছে অন্যতম দুর্লভ বৈশিষ্ট্য যেখানে আরবি ভাষা বিশ্বের সকল ভাষার উপর শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। এর ফলে কোন শব্দরূপ তার শব্দমূলের দিকে ফিরে. যার একটি নির্দেশিত অর্থ রয়েছে। এটি হচ্ছে মূল উপাদান যা হতে বিভিন্ন শব্দ ও অর্থের শাখা বের হয়। যেমন, কর্তা বিশেষ্য, কর্ম বিশেষ্য, ক্রিয়া, বিশেষণ ছাড়াও আরো নানা শাখা। সাধারণত আরবী শব্দমূল তিন বর্ণ থেকে শুরু হয়, এবং চার থেকে পাঁচ বর্ণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শব্দ মূল س ل م হতে তৈরি হয়েছে سلم ، سلّم. سالم، مسلم، سلمان، سلمی ،سلامة। উল্লেখ্য সব শব্দ তাদের ব্যাখ্যায় "নিরাপত্তা" অর্থ গ্রহণ করে। তদ্রূপ শব্দমূল " سمل" যার রূপান্তর হয় سلم، مسل، ملس، لمس ،لسم, যেগুলো অর্থ কোন না কোনভাবে বন্ধুত্ব ও সহৃদয়তা দাঁড়ায়। একটি শব্দমূল হতে হাজারখানেক শব্দ তৈরি করা যায়।
৩. المترادفات ( সমার্থক শব্দ) :
আরবি ভাষায় সমার্থক শব্দের সংখ্যা প্রচুর। এ প্রতিশব্দ / সমার্থক শব্দগুলো আরবি শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে যার সাথে বিশ্বের অন্য কোন চলমান ভাষার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রতিটি সমার্থক শব্দ সেই বস্তু বা প্রাণীর নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি প্রকাশ করে। প্রখ্যাত ভাষাবিদ জুরজি যাইদান এর মতে, " প্রত্যেক ভাষায় সমার্থক শব্দ থাকে, যা কতিপয় শব্দ একই অর্থ বহন করে, কিন্তু আরবরা এক্ষেত্রে বিশ্বের সকল ভাষাকে অতিক্রম করেছে। তাদের ভাষায় বছর শব্দটার জন্য ২৪ টি প্রতিশব্দ রয়েছে, আলোর জন্য ২১ , অন্ধকারের জন্য ৫২ , মধুর জন্য ৮০ , উটের জন্য ২৫৫ , সিংহের জন্য ৩৫০ , মেঘের জন্য ৫০, বৃষ্টির জন্য ৬৪ , পানির জন্য ১৭০ ইত্যাদি কয়েকটি উদাহরণ। আরবরা 'লম্বা ' বিশেষণটি বুঝানোর জন্য ৯১ টি শব্দ ব্যবহার করে, 'খাটো 'বুঝাতে ১৬০ টি, এ ধরনের তালিকা তৈরি বেশ কঠিন। "
৪. الأضداد ( বিরোধার্থক / বিপরীতার্থক শব্দ) :
একটি শব্দ দুটি বিপরীতমুখী অর্থ বহন করে থাকে, যা আরবি ভাষার ব্যতিক্রমধর্মী একটি বৈশিষ্ট্য। যেমন, আরবরা الصريم শব্দটি দিন - রাত উভয়ের জন্য ব্যবহার করে, তদ্রূপ الصارح সাহায্যকারী - সাহায্যপ্রার্থী উভয়কেই বুঝায়, السدفة বুঝায় অন্ধকার - আলো, الزوج নর - নারী, البسل হালাল - হারাম ،الجون সাদা - কালো ইত্যাদি।
আরবি ভাষা তার ধ্বনিগত পরিসরে অলৌকিকতা ও পরিপূর্ণতার শিখরে পৌঁছেছে। আরবি ভাষা তার শব্দতত্ত্ববিষয়ক পরিবর্তন সত্বেও ধ্বনিগত উপাদানগুলো সংরক্ষণে সেমেটিক ভাষাসমূহের মধ্যে একক অধিকার অর্জন করেছে । এই উপাদানগুলো হলো ধ্বনি উচ্চারণের স্থান বা মাখরাজ এবং সেগুলোর সুন্দর গুণাবলি । আরবি শব্দের বৈশিষ্ট্য এমন যে, শব্দের অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝার জন্য বক্তার স্বরের দিকে বা উচ্চারণে লক্ষ্য রাখতে হয়।
৬. مفردات (শব্দভাণ্ডার) :
শব্দভান্ডারের দিক দিয়ে আরবি ভাষা সবচেয়ে সমৃদ্ধ। যেখানে শব্দকোষে ইংরেজি শব্দ আছে ৫ লাখ, ফরাসি ১ লাখ ৫০ হাজার, রাশিয়ান ১ লাখ ৩০ হাজার, সেখানে আরবি ভাষায় শব্দ সংখ্যা আছে ১২,৩ মিলিয়ন যার ফলে আরবি ভাষার শব্দভাণ্ডারকে সবচেয়ে ধনী বলা হয়। বিখ্যাত আরবি শব্দকোষ লিসানুল আরব এ মাদ্দাহভিত্তিক শব্দ বা শুধুমাত্র শব্দমূল রয়েছে ৮০ হাজার, যেখান থেকে আরো বহু শব্দ বের হয়।
৭. فصاحة ( ভাষার বিশুদ্ধতা / বাচনভঙ্গি )
আরবি ভাষার বাচনভঙ্গি ভাষাগতভাবে ত্রুটিমুক্ত, যেমনঃ শব্দের মাঝে অসঙ্গতি, শব্দ গঠনে অপারগতা, শব্দগত জটিলতা, অর্থগত জটিলতা ইত্যাদি থেকে মুক্ত। আরবি ভাষা হচ্ছে কোন পরিস্থিতি ও বর্ণনা প্রকাশের সবচেয়ে নির্ভুল একটি ভাষা। আরবি শব্দভাণ্ডার এত বিশাল যে শব্দের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে মনের ভাব ও মন্তব্য সুস্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত ও সর্বোত্তমভাবে ব্যক্ত করা যায়, যা অন্য ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে তুলে ধরা দুষ্কর।
৮. التعريب ( আরবিকরণ) :
আরবিকরণ হল একটি বিদেশি শব্দকে আরবি মিটার ও কাঠামো অনুপাতে তৈরি করার প্রক্রিয়া। বিদেশি শব্দকে আরবি বর্ণে রূপান্তর করে শব্দ তৈরি করা হয় যাতে আরবরা তাদের মত করে উচ্চারণ করতে পারে। আরবি ভাষার এক বিশেষ যোগ্যতা আছে বিদেশি শব্দকে বর্ণনা করার এবং নিজস্ব ছাঁচে ঢেলে আরবিকরণ করে গঠন করার, যা আরবি ভাষার এক ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য। যেমন: পাকিস্তান > বাকিস্তান, চীন > সীন।
৯. لغة شاعر: ( কাব্যিক ভাষা) :
আরবি একটি কাব্যিক ভাষা, যা শ্রোতার মনে প্রভাবশালী অনুভূতি রেখে যায় এবং বিভিন্ন কাব্যিক চিত্রের মাধ্যমে তা স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়, যেমন: উপমা, রূপক, সঙ্কেত, লক্ষণা, সংক্ষেপণ, অধিক প্রতিশব্দের ব্যবহার, শব্দের গাম্ভীর্যতা, কমনীয়তা, সূক্ষ্মতা, অর্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অক্ষর ও শব্দের উচ্চারণ ইত্যাদি।
১০. الثبات ( স্থিতিশীলতা) :
আরবি ভাষার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার স্থিতিশীলতা। আরবি ভাষা যুগ যুগ জুড়ে তার স্থিতিশীলতা দ্বারা স্বতন্ত্র স্থান বজায় রেখেছে। এটি সকল সময় ও স্থানের জন্য যথোপযুক্ত। যার ফলে আরবরা এখনও হাজার বছর পুরনো সাহিত্য পড়তে ও বুঝতে সক্ষম যা অন্য ভাষায় অসম্ভব।
একজন মুসলিমের জীবনে আরবী ভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ড. ইসরার আহমেদ এর মতে ( রাহিমাহুল্লাহ), কোরআন বুঝার জন্য প্রয়োজনীয় আরবি ভাষা শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। কোরআনের ভাষাকে আল্লাহ সহজ করেছেন যাতে মানুষ স্মরণ করতে পারে, উল্লেখ করতে পারে, উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। বিশ্বব্যাপি কোরআনের অসংখ্য হাফেজ, আলেম এর জ্বলন্ত প্রমান। সুরা ক্বামারে ১৭, ২২,৩২,৪০ নম্বর চারটি আয়াতে আল্লাহ একই কথা উল্লেখ করেছেন।
সুরা শুআরা: ১৯৫
بِلِسَانٍ عَرَبِىٍّۢ مُّبِينٍۢ ١٩٥
In a clear Arabic language.
— Saheeh International
অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়।
_ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সুরা ইউসুফ : ২
إِنَّآ أَنزَلْنَـٰهُ قُرْءَٰنًا عَرَبِيًّۭا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ٢
Indeed, We have sent it down as an Arabic Qur’ān that you might understand.
— Saheeh International
নিশ্চয় আমরা এটা নাযিল করেছি কুরআন হিসেবে আরবি ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পারো ।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সুরা যুমার : ২৮
قُرْءَانًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِى عِوَجٍۢ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ ٢٨
[It is] an Arabic Qur’ān, without any deviance that they might become righteous.
— Saheeh International
বক্রতামুক্ত আরবী কুরআন। যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারে।
— Rawai Al-bayan
সুরা হা মীম সিজদাহ্ : ৩
كِتَـٰبٌۭ فُصِّلَتْ ءَايَـٰتُهُۥ قُرْءَانًا عَرَبِيًّۭا لِّقَوْمٍۢ يَعْلَمُونَ ٣
A Book whose verses have been detailed, an Arabic Qur’ān for a people who know,
— Saheeh International
এক কিতাব, যার আয়াতগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যাকৃত, আরবী ভাষার কুরআন, জ্ঞানসম্পন্ন মানুষদের জন্য।
— Taisirul Quran
সুরা হা মীম সিজদাহ্ :৪৪
وَلَوْ جَعَلْنَـٰهُ قُرْءَانًا أَعْجَمِيًّۭا لَّقَالُوا۟ لَوْلَا فُصِّلَتْ ءَايَـٰتُهُۥٓ ۖ ءَا۬عْجَمِىٌّۭ وَعَرَبِىٌّۭ ۗ قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ هُدًۭى وَشِفَآءٌۭ ۖ وَٱلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ فِىٓ ءَاذَانِهِمْ وَقْرٌۭ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ يُنَادَوْنَ مِن مَّكَانٍۭ بَعِيدٍۢ ٤٤
And if We had made it a foreign [i.e., non-Arabic] Qur’ān, they would have said, "Why are its verses not explained in detail [in our language]? Is it a foreign [recitation] and an Arab [messenger]?" Say, "It is, for those who believe, a guidance and cure." And those who do not believe - in their ears is deafness, and it is upon them blindness. Those are being called from a distant place.
— Saheeh International
আর যদি আমরা এটাকে অনারবী ভাষায় কুরআন তবে তারা অবশ্যই বলত, 'এর আয়াতগুলো বিশদভাবে বিবৃত হয়নি কেন? ভাষা অনারবীয়, অথচ রাসূল আরবীয়! বলুন, ‘এটি মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও আরোগ্য।' আর যারা ঈমান আনে না তাদের কানে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন এদের (অন্তরের) উপর অন্ধত্ব তৈরী করবে। তাদেরকেই ডাকা হবে দূরবর্তী স্থান থেকে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
وَقَالَ ٱلرَّسُولُ يَـٰرَبِّ إِنَّ قَوْمِى ٱتَّخَذُوا۟ هَـٰذَا ٱلْقُرْءَانَ مَهْجُورًۭا ٣٠
And the Messenger has said, "O my Lord, indeed my people have taken this Qur’ān as [a thing] abandoned."
— Saheeh International
আর রাসূল বলবে, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে। (২৫:৩০)
— Rawai Al-bayan
১. القراءة الميسرة
২. خصائص اللغة العربية : موضوع
৩. خصائص اللغة العربية : Darul Uloom Deoband
৪. Oriental gems in English crown
৫. Fifteen poems
৬. Muhammad : A Biography of the Prophet
৭. আল কুরআনুল কারীমের আলংকারিক বৈশিষ্ট্য
৮. কালের কণ্ঠ
৯.মুসলিম বাংলা অ্যাপ
১০.Quran.com
১১. Wikipedia
ছবি: কাটছাট from google