ফেলিসিয়েন রপস - The Librarian

শয়তান, বই, এবং দেহ: এক লাইব্রেরিয়ানের গপ্পো

একটা পুরনো ছবি, ঠিক ততটাই পুরনো যতটা পুরনো কালো কালির ছিটেফোঁটা। নাম— The Librarian, আঁকিয়ের নাম— ফেলিসিয়েন রপস। লোকটা একটু খেয়ালি, অতএব কাজেও খেয়ালিপনা। কী দেখায় ছবিতে? একখানা নগ্ন নারী, বইয়ের স্তূপের মাঝে বসে পড়ে আছে বেহায়াপনার গল্প। এবং পাশে কে? শয়তান! বড়ই মহৎপ্রাণ সে, দস্তানা পরা হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, যেন বলছে— “এই নাও, আরও বই নাও, পাঠশালার খিদে মেটাও!”

নিউটনের আপেল পড়েছিল মাটিতে, এদিকে এই দুনিয়াদারি ঘেরা লাইব্রেরির মাঝে পড়ে আছে এক অন্যরকম ফল— নিষিদ্ধ জ্ঞান, শরীরের নাড়িভুঁড়ির অন্ধকার গলি, কামনার পাতলা কাগজ, শব্দের ফাঁদে পড়া নিষিদ্ধ সম্পর্ক। সভ্যতা কি জানতো, একদিন এমন লাইব্রেরি হবে যেখানে জ্ঞান বিতরণের দায়িত্ব নেবে শয়তান নিজে?

এখন ব্যাপারটা বড়ই গুরুতর। কারণ এই ছবির থিয়েটারে বই পড়া হচ্ছে এক অপরাধের মতো, আর অপরাধী? নারী। বই পড়া ছেলেরা পণ্ডিত হয়, আর মেয়েরা? তারা হয় বিপথগামী! সমাজের চশমা একটু বাঁকা হলেই টের পাওয়া যাবে, এই ছবির নারী শুধু বই পড়ছে না, নিজের শরীরের ভাঁজে ভাঁজে কল্পনার দুঃসাহস মেখে নিচ্ছে। তাই তো শয়তান তাকে আরও বই বাড়িয়ে দেয়, আরও গভীরতায় নিয়ে যায়। যেন এই লাইব্রেরি কোনও আস্ত গোপন আখড়া, যেখানে বানরদের হাতে বই না দিয়ে, বইয়ের হাতেই বানর তুলে দেওয়া হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শয়তানই কি একমাত্র মহৎ পাঠক? কারণ, ধর্মগ্রন্থগুলোও পড়তে বলে, কিন্তু শর্ত দিয়ে। আর যারা এসব শর্তের ধার ধারে না, তারা কি বিপথে চলে যাচ্ছে, নাকি সত্যিকারের জ্ঞান লাভ করছে?

ফেলিসিয়েন রপসের এই লাইব্রেরিয়ান আসলে এক বিশাল কৌতুক। এই ছবি থেকে চোখ সরিয়ে অন্য কোথাও তাকানো যায় না। একদিকে নগ্ন নারী, অন্যদিকে শয়তান— সভ্যতার দুই প্রান্তের টানাপোড়েনের মাঝে দাঁড়িয়ে পাঠক হয়ে উঠছে এক অদ্ভুত জীব। একদিকে তার জ্ঞানের তৃষ্ণা, অন্যদিকে শরীরের মুক্তি। যেন বলছে, “যা নিষিদ্ধ, তাই তো প্রকৃত সত্য।”

আমাদের লাইব্রেরি কবে এমন হবে? যেখানে নিষিদ্ধ জ্ঞানকে আর কপটতার পুঁটলি মুড়ে রাখা হবে না, যেখানে বই পড়া নারীকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারবে না শালীনতার মুখোশ পরা সমাজ? যখন লাইব্রেরির দোরগোড়ায় সত্যিকারের মুক্তি আসবে, তখন কি শয়তান আর বই বাড়িয়ে দেবে, নাকি হাসবে আর বলবে— “চলো, আমার আর দরকার নেই।”