প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক  করুন।। 
---->---->---->---->----->----->---->----->----->


পুঁজি বলতে আমরা মূলত অর্থকে বুঝি, যা উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়। আমরা ভুলবশত উৎপাদক গোষ্ঠী, ব্যবসায়িক ম্যানেজার ও চাকরি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাদ বলে থাকি। কিন্তু কীভাবে তাদের পুঁজিবাদ বলব, যখন তাদের ব্যবসায়িক পুঁজির জোগানদাতা অন্য কোনো বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী! মূলত এই বিনিয়োগকারীদের চাপে পড়ে উৎপাদক, ম্যানেজার এবং চাকরি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্বভাবগত ভালো রূপ থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়। পায়ের নিচে মাটি ধরে রাখতে এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ মেটাতে তারা শ্রমবাজারের ওপর 
কঠিন রূপ ধারণ করে। ফলে পুঁজিবাজার ও শ্রমবাজারের মধ্যে সব সময় বিরোধ লেগে থাকে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ কখনোই সম্ভব নয়; যতদিন না বিশ্ব অর্থব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ এই স্বার্থান্বেষী মহল থেকে ছিনিয়ে আনা যাবে।

আজ পুরো পৃথিবী এমন কয়েকটি ভয়ংকর মতবাদে পরিচালিত হচ্ছে, যার অধিকাংশই আমাদের অজানা। যেমন : 'সুপার ক্যাপিটালিজম'- যেখানে বলা হয় 'স্বর্ণই প্রকৃত সম্পদ'। 'সুপার গভর্নমেন্ট' একটি পৃথক ও স্বাধীন সরকারব্যবস্থা, যার উদ্দেশ্য পৃথিবীতে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার প্রতিষ্ঠা করা। যতদিন না এই ভয়ংকর মতবাদ দুটোর অবসান ঘটবে, ততদিন পর্যন্ত পুঁজিবাজার ও শ্রমবাজারের দ্বন্দ্ব চলতেই থাকবে।

আমেরিকা আবিষ্কার

ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, আমেরিকা আবিষ্কার করেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। তবে এটা শেখায়নি, তিনি কাদের সহযোগিতায় এ দেশের সন্ধান পান।

আজ অবধি যে সকল ঐতিহাসিক সমুদ্র অভিযান মানুষকে নতুন সব জ্ঞান ও প্রাচুর্যতা এনে দিয়েছে, তার অর্ধেক সম্ভব হয়েছে কেবল ইহুদিদের জন্য। যাযাবর জাতি হওয়ায় ইহুদিদের একটি বিশেষ সুবিধা হলো- পৃথিবীর আনাচে-কানাচে কোথায় কী আছে, তা তারা খুব ভালো করেই জানে। তা ছাড়া সমুদ্রযাত্রায় মানুষ যেসব যন্ত্রপাতি বহুকাল ধরে ব্যবহার করেছে, তার অধিকাংশই ইহুদিদের আবিষ্কার। যেমন ম্যাপ, কম্পাস, জ্যোতির্বিজ্ঞান ইত্যাদি। এ কারণে সমুদ্র অভিযান পরিচালনা করার ক্ষেত্রে তাদের মতো দক্ষতা আর কোনো জাতির ছিল না। এ জন্য প্রতিটি দেশের নৌবিভাগে তাদের আলাদা কদর ছিল।

১৪৯২ সালের ২ আগস্ট ইহুদিদের তিন লাখ অধিবাসীকে স্পেন থেকে নির্বাসিত করা হয়। ঠিক তার পরদিন ৩ আগস্ট কলম্বাস তাদের মধ্যে একদল নাবিককে সঙ্গে নিয়ে পশ্চিমসমুদ্র পথে বেরিয়ে পড়েন। বিশেষ এই জাতিগোষ্ঠীর সাথে সখ্যতার কথা কলম্বাস বহুবার নিজ মুখে স্বীকার করেছেন। নিজের নতুন সব অভিযান পরিকল্পনা এবং আবিষ্কারের কথা প্রথমে তিনি এ দলকে জানাতেন।

ছোটোকাল থেকেই শুনে আসছি, সমুদ্র অভিযানের প্রতি কলম্বাসের এতটা আগ্রহ দেখে রানি ইসাবেলা নিজের বহু স্বর্ণালংকার তাকে দান করে দিয়েছিলেন। সেই দানের অর্থে নির্মিত হয় জাহাজ, ক্রয় করা হয় প্রয়োজনীয় সব রসদপত্র। তবে এই দান যে তিনি এমনি এমনি করেননি, সেই তথ্য সহজে কোথাও উল্লেখ করা হয় না।

তৎকালীন স্পেন সাম্রাজ্যে রানি ইসাবেলার ঘনিষ্ঠ তিনজন ইহুদি উপদেষ্টার পরিচয় পাওয়া যায়। তারা হলেন- ভ্যালেন্সিয়ার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং রয়েল টেক্সাসের ইজারাদার Luis de Santagel, স্পেনের সরকারি কোষাধ্যক্ষ Gabriel Sanchez এবং রয়েল চ্যাম্বারলিনের সদস্য Juan Cabrero। মানুষের কল্পনাশক্তি কীভাবে প্রভাবিত করতে হয়, সেই জ্ঞান তাদের খুব ভালো করেই ছিল।

সে সময় স্পেনের অর্থনীতিতে খুব বাজে সময় যাচ্ছিল। বাণিজ্যে হিমশিম খাচ্ছিল বলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সম্পদের পরিমাণ কমতে থাকে। বিভিন্ন দেশ থেকে ধার-দেনা করে তাদের খাদ্য ক্রয় করতে হচ্ছিল। অর্থনৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া তাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়ে। সেকালে মানুষের মনে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছিল। তারা বিশ্বাস করত, নতুন কোনো ভূমি খুঁজে পেলে হয়তো গুপ্তধন পাওয়া যাবে। মূলত এটি ছিল ইহুদিদের দীর্ঘকালীন প্রোপাগান্ডার" ফল। তারা সুকৌশলে রানির মগজেও এ বিশ্বাসটি ঢুকিয়ে দেয়। তিনি ভাবেন, সত্যি যদি কলম্বাস নতুন কোনো ভূমি খুঁজে পায়, তবে অবশ্যই সেখানে অনেক ধন-সম্পদ পাবে; যা দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তাই নিজের বহু স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে তিনি প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করেন। Luis de Santagel অভিযান শুরুর আগেই রানির নিকট অর্থের আবেদন করেন। তাকে ১৭,০০০ ইউরোপিয়ান স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হয় (১৯২৩ সালের ১,৬০,০০০ ডলার মূল্যের সমান), যা সম্পূর্ণ অভিযানের খরচের চেয়েও অনেক বেশি।

কলম্বাসের সঙ্গী হিসেবে জাহাজে ছিল উচ্চপদস্থ পাঁচজন ইহুদি নাবিক। তাদের পরিচয়- দোভাষী Luis de Torres শল্য চিকিৎসক Marco, চিকিৎসক Bernal, Alonzo de la Calle Gabriel Sanchez। অভিযানের মাঝপথে Luis de Torres কিউবাতে নামেন। সেখানে তিনি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তামাক চাষ শুরু করেন, আর রাতারাতি বনে যান তামাক শিল্পের সম্রাট।

Luis de Santagel ও Gabriel Sanchez এই অভিযানের ছুতোয় রানির কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করে নেয়, কিন্তু আমেরিকা আবিষ্কারের পর তারাই আবার কলম্বাসকে ষড়যন্ত্রের জালে আটকে ফেলে। Bernal এই কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। উপদেষ্টাদের কথায় শেষ পর্যন্ত রানিও ক্ষেপে ওঠেন। কারণ যে কল্পিত গুপ্তধনের লোভে তাকে আমেরিকা পাঠানো হয়েছিল, বাস্তবে তার কিছুই পাওয়া যায়নি। উলটো পুরো অভিযান আর্থিক ক্ষতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়। তা ছাড়া রেড-ইন্ডিয়ানদের সাথে তাদের যুদ্ধ তখন চরমে। শেষমেষ এই বিখ্যাত নাবিকের স্থান হয়। জেলখানায়।

**(১৪. প্রোপাগান্ডা-কোনো একটি বিশেষ উদ্দেশ্য বা অবস্থানের দিকে জনমত তৈরির উদ্দেশ্য বা অবস্থানের দিকে জনমত তৈরির উদ্দেশ্যে যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে এমন সব বিষয় প্রচার করা, যাতে সাধারণ জনগণের ধ্যানধারণা ওই একটি দিকে পরিচালিত হয়।) 

এবার তারা ভাগ্যের সন্ধানে আমেরিকাকে নিয়ে পরিকল্পনা আঁটা শুরু করে। মূলত ইউরোপ, এশিয়া বা আফ্রিকার কোথাও দীর্ঘদিন থাকার সুযোগ পাচ্ছিল না; কিছুদিন পরপরই তাদের বিভিন্ন দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছিল। তাই তারা এমন একটি ভূমির সন্ধান করছিল, যেখান থেকে আর বের হতে হবে না। জেরুজালেম পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তা-ই হবে তাদের নিরাপদ আবাসভূমি।

শুরুতে তারা দক্ষিণ আমেরিকায় যাত্রা করে, কিন্তু সে সময় ব্রাজিলের সাথে ডাচদের সামরিক রেষারেষী চলছিল বলে তারা পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনে। পরে তারা ডাচদেরই একটি উপনিবেশের দিকে যাত্রা করে, যা আজ নিউইয়র্ক নামে পরিচিত। কিন্তু ডাচ গভর্নর Peter Stuyvesant এই অভিবাসী গোষ্ঠীকে সেখানে থাকার অনুমতি দেননি। তিনি তাদের দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন, কিন্তু তারা আগে থেকেই নিজেদের সুরক্ষা বলয় তৈরি করে রেখেছিল। ফলে অভ্যর্থনা না জানালেও গভর্নর সাহেব তাদের একেবারে ফেলে দিতে পারলেন না। কিছু শর্তের বিনিময়ে সেখানে থাকার অনুমতি দিলেন। শর্তগুলো ছিল-

১. ডাচ কোম্পানিগুলোতে তাদের সম্পদ বিনিয়োগ করতে হবে।

২. সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

৩. পাইকারি শিল্পসহ সকল ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে।

সামান্য সুযোগ পেলে তারা কী করতে পারে, তা তিনি ভালো করেই জানতেন। তাদের কোনোভাবে আটকে রাখা যায় না। একদিকে আটকে রাখলে অন্য দিকে ঠিকই উপায় বের করে নেয়।

যখন ইহুদিদের নতুন কাপড়ের বাণিজ্যে একঘরে করা হলো, তখন তারা পুরাতন কাপড় সংগ্রহ করে বিক্রি করা শুরু করল। মুহূর্তেই পুরাতন কাপড়ের বাণিজ্যে হইচই পড়ে গেল। এমন কাণ্ড দেখে সবাই অবাক। এটা কী করে সম্ভব! ইহুদিদের পণ্য বাণিজ্যে নিষিদ্ধ করা হলে- তারা ফেলে দেওয়া নষ্ট পণ্যকে কাজে লাগিয়ে ব্যাবসা করতে শুরু করে। পৃথিবীতে তারাই প্রথম জাতি, যারা ফেলে দেওয়া নষ্ট পণ্যের বাণিজ্য করেছে।

ইহুদিরাই প্রথম সমুদ্রে ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে মালামাল উদ্ধারের (Salvage) ধারণা জন্ম দিয়েছে; বিষয়টি অনেকটা গুপ্তধনের মতো। তারাই শিখিয়েছে- কীভাবে পুরাতন কাপড় ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে পুরাতন পালক পরিষ্কার করতে হয় এবং কীভাবে কাজুবাদাম ও খরগোসের চামড়া ব্যবহার করতে হয়। পশমি শিল্পে তাদের আগ্রহ সব সময়ই অনন্য পর্যায়ের ছিল। বর্তমানেও এই শিল্প ইহুদিরাই নিয়ন্ত্রণ করছে। পশমি পণ্য উৎপাদনকারী যেসব বড়ো বড়ো ব্রান্ড ও কোম্পানির নাম সচরাচর শোনা যায়, তাদের সিংহভাগ শেয়ার-ই এই বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর। যেকোনো প্রতিকূল প্ররিস্থিতি কীভাবে নিজেদের আওতায় আনতে হয়, তা ইহুদিদের চেয়ে ভালো আর কেউ দেখাতে পারবে না।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও Mr. Stuyvesant একসময় তাদের নিউইয়র্ক বন্দর ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করতে বাধ্য হন। তাদের চোখে এই অঞ্চলটি ছিল মর্তের স্বর্গ। তারা দলবেধে সেখানে পাড়ি জমাতে শুরু করে। এভাবে নিউইয়র্ক হয়ে উঠে তাদের সর্বাধিক জনবসতির শহর এবং আমেরিকার প্রধান আমদানি ও রপ্তানিবন্দর। কোনো ব্যবসায়ী এ বন্দর ব্যবহার করতে চাইলে তাকে বন্দর মালিকদের কর (Tax) দিতে হতো। যেহেতু এই শহর তাদের প্রচুর ধন-সম্পদ এনে দিয়েছে, তাই তারা গর্ব করে বলত- হয়তো তাদের ধর্মে এ ভূমি সম্পর্কেই ভবিষ্যদবাণী করা হয়েছিল, আর এটাই হলো নিউ জেরুজালেম। যতদিন না তারা প্রকৃত জেরুজালেমে ফিরে যেতে পারছে, ততদিন পর্যন্ত এখানেই থাকবে।

George Washington-এর শাসনামলে আমেরিকায় তাদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০০০, কিন্তু এদের সবাই ছিল সচ্ছল ব্যবসায়ী। আমেরিকা যেন ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পায়, সে জন্য Haym Saloman (একজন ইহুদি ব্যবসায়ী) তার সকল সম্পদ স্বাধীনতাযুদ্ধে বিনিয়োগ করে। বিনিময়ে আমেরিকান সরকার তাকে এবং তার জাতিগোষ্ঠীকে অবাধে বাণিজ্য করার লাইসেন্স দেয়। ফলে মুনাফা উপার্জনের পথে তাদের আর কোনো বাধাই থাকল না।

তাদের নিকট সম্পদ ও ব্যক্তিসত্তা দুটি আলাদা বিষয়। কেউ বিপদে পড়লে তারা অবশ্যই সহানুভূতি জানাবে, কিন্তু অর্থ দিয়ে সাহায্য করার ঘটনা খুবই কম।

মনে করুন, নিজের ভিটে বাড়ি বন্ধক রেখে আপনি তাদের কাছ থেকে কিছু ঋণ নিলেন এবং ব্যাবসার জন্য পণ্য কিনলেন, কিন্তু গুদামঘরে আগুন লেগে সব পণ্য পুড়ে গেল। পরিবার নিয়ে আপনার এখন পথে বসার অবস্থা। এমতাবস্থায় আপনি ঠিকই তাদের সহানুভূতি পাবেন, তাদের পক্ষ থেকে আপনার ভিটে-বাড়ির দাবি ছেড়ে দেওয়া একেবারে অসম্ভব। তাদের চোখে It was only Business; তবে ব্যতিক্রমী কিছু উদাহরণ থাকতেই পারে।

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জার্মানিতে যে সুইটশপ" প্রতিষ্ঠা পায়, তা বহু আগেই নিউইয়র্কের অলি- গলিতে ছড়িয়ে পড়ে। আজকের দিনে সুইটশপকে তো সমাজব্যবস্থার অংশই বলা যায়। সবার ওপর প্রভুত্ব কায়েমের যে মনোভাব তারা যুগ যুগ ধরে লালন করে এসেছে, তারই বহিঃপ্রকাশ আজকের শ্রমবাজার। তারা যা চেয়েছে তাই হয়েছে। সাধারণ মানুষের সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছুই নেই। কারণ, এসব শিল্প-কারখানায় তারা যা-ই তৈরি করে, তা-ই আমাদের ক্রয় করতে হচ্ছে। তাদের পারিশ্রমিকের ওপর মুনাফা যোগ করে যখন বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়, তখন সাধারণ মানুষ ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই এত সব কর্মসংস্থান করেও মানুষের আহার-বস্ত্র নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

**(১৫. সুইটশপ-যেখানে নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে শ্রমিকদের দিয়ে হাড়ভাঙা খাটুনি করিয়ে নেওয়া হয়।)

ইহুদিদের মনে দেশপ্রেমের কোনো বালাই নেই। নাগরিকত্ব বিষয়টি তাদের কাছে মুনাফা উপার্জনের হাতিয়ার। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। সবাই বিশ্বাস করে আমেরিকা হলো খ্রিষ্টানদের দেশ। এ দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য সবকিছু তারা-ই পরিচালনা করছে। পৃথিবীর অপর প্রান্তে থাকা কোনো খ্রিষ্টান এ দেশের পণ্য হাতে পেয়ে এই ভেবে খুশি হয়- এটা হয়তো তার-ই কোনো ধর্মীয় ভাই তৈরি করেছে। কিন্তু ভালোভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, এ দেশের নাম করা প্রায় সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকই ইহুদি। জ্যান্টাইলদের কিছু শেয়ার থাকলেও তা পরিমাণে অনেক কম। প্রতিষ্ঠানের উঁচু পদগুলো তো ইহুদিদের জন্যই বরাদ্দ রাখা হয়। কী উৎপাদন করা হবে, কীভাবে ব্যাবসা পরিচালিত হবে এবং কীভাবে মুনাফা বণ্টন করা হবে, তার সবই ইহুদিরা নিয়ন্ত্রণ করে। 'American Importing Company' অথবা 'American Commercial Company' নামগুলো ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হলো- আমেরিকার সাধারণ মানুষ যেন বুঝতে না পারে এগুলো ইহুদিদের প্রতিষ্ঠান। যেসব শিল্পে তারা ইতোমধ্যেই একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে, তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো-

চলচ্চিত্রশিল্প

• থিয়েটারশিল্প

- চিনিশিল্প

• তামাকশিল্প

• মাংসশিল্পের ৫০ ভাগ

জুতাশিল্পের ৬০ ভাগ

• পোশাকশিল্প

• সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রশিল্প

• অলংকারশিল্প

• খাদ্যশস্য

• বর্তমানে তুলাশিল্প

• কলরাডো অঙ্গরাজ্যের ধাতু বিগলনশিল্প

• ম্যাগাজিন প্রকাশনী

• খবর প্রকাশনী

• তরল পানীয়শিল্প

■ ঋণ ব্যবসায়

আজ তাদের যে সাফল্য, তা অগ্রাহ্য করার বিষয় নয়। তাদের পন্থা অনুসরণ করে যে কেউ-ই সম্পদশালী হতে পারবে। যেমন: বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়ানো, পণ্যকে ব্যবসায়ের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা, সুদের বিনিময়ে ঋণ দেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু জ্যান্টাইলদের পক্ষে এসব কাজ গুছিয়ে করা অসম্ভব।

কেবল কৃষি কাজে ইহুদিরা কখনো সফল হতে পারেনি। কারণ, ইহুদিরা কায়িক শ্রম একদম-ই করতে পারে না। তারা হলো পরজীবী; বেঁচে থাকে অন্যের জীবিকা ভোগ করে। সারা বছর পরিশ্রম করে একজন কৃষক যে ফসল ফলাবে, তা তারা কেড়ে নিয়ে বাণিজ্য করবে। এ পর্যন্ত তারা বহুবার পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে কৃষি উপনিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছে এবং প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। তবে দুগ্ধ ও পশু পালন শিল্পে তারা যথেষ্ট উন্নতি করেছে।

আসলে মাটির সাথে তাদের সম্পর্ক কখনোই ভালো ছিল না। তারা জন্মেছে শুধু বাণিজ্য করার জন্যই। এই ছোট্ট বিষয়টি-ই পরিষ্কার করে দেয়, কেন প্যালেস্টাইন নিয়ে তাদের এমন ব্যাকুলতা! প্যালেস্টাইনকে বলা হয় প্রাচ্য ও প্রতিচ্যের বাণিজ্যিক দ্বার। এই ভূমিকে নিজেদের করে নেওয়ার অর্থ হলো এশিয়া-ইউরোপ-আফ্রিকা ও মেডিটারিয়ান সাগরের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা।

চলবে....